বৃষ্টিপাত |
বিভিন্ন প্রকার বৃষ্টিপাত ও উদাহরণ || বৃষ্টিপাত কয় প্রকার ||
আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় বিভিন্ন প্রকার বৃষ্টিপাত ও উদাহরণ সমন্ধে। জীবজগতে উদ্ভিদ ও প্রাণীদের বেঁচে থাকার জন্য বৃষ্টিপাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কখনো বেশী বৃষ্টির জন্য বন্যা দেখা যায় আবার কম বৃষ্টির কারণে খরার মত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যার ফলে পরিবেশের ক্ষতি হয়। জল চক্র এবং পরিবেশের উপর বৃষ্টিপাতের প্রভাব বোঝার জন্য সঠিক বৃষ্টিপাত পরিমাপ প্রয়োজন। কোনো জায়গায় কতটা বৃষ্টিপাত হয়েছে তা বৃষ্টিপাত পরিমাপক (Rain Gauge) যন্ত্রের সাহায্যে পরিমাপ করা হয় ।
অধঃক্ষেপণ বা বৃষ্টিপাত::
সূর্যের তাপে নদী, খাল, সাগর, মহাসাগর বা যেকোনো জলাধার থেকে জল বাষ্পীভূত হয়ে ওপরে উঠে যায়। বায়ুতে ভাসমান এই জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা বা মেঘের সৃষ্টি করে। ভাসমান এই মেঘ বা জলকণাসমূহ যখন পরস্পর মিলে বড় জলকণায় পরিণত হয় তখন পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে আর ভেসে থাকতে পারে না, ভূ-পৃষ্ঠে এসে পড়ে। এই ঘটনাকে বলে অধঃক্ষেপণ। এই অধঃক্ষেপণের বিভিন্ন রূপ-বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, শিলাবৃষ্টি ইত্যাদি। বিভিন্ন প্রকার বৃষ্টিপাত ও উদাহরণ গুলো দেখে নেওয়া যাক। বৃষ্টিপাতের বিভিন্ন রূপ-
পরিচলন বৃষ্টি (Convectional):
নিরক্ষীয় অঞ্চলে বায়ুতে জলীয় বাষ্প বেশি থাকে। দিনের বেলায় উষ্ণ ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে ঐ আর্দ্র জলীয় বাষ্প ওপরে উঠে যায় এবং ওপরের শীতল বায়ুর সংস্পর্শে আর্দ্র বায়ুও শীতল হয়ে যায়। ওপরে চাপ কম থাকার ফলে ঐ বায়ু শীতল ও ঘনীভূত হয় এবং বৃষ্টিপাতরূপে ঐ স্থানেই নেমে আসে। একে পরিচলন বৃষ্টি বলে।
উদাহরণ- নিরক্ষীয় অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে বিকেলের দিকে এরূপ বৃষ্টিপাত হয়। পশ্চিমবঙ্গেও গ্রীষ্মকালে বিকেলের দিকে এইভাবে বৃষ্টিপাত হয়।
শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টি (Relief):
জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় পর্বতে বাধাপ্রাপ্ত হলে, পর্বতের গা বেয়ে ওপরের দিকে ওঠে এবং প্রসারিত ও শীতল হয়। এর ফলে পর্বতের প্রতিবাত (Windward) ঢালে (যে ঢালে বাষ্পপূর্ণ বায়ু বাধা পায়) প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। একে বলে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টি। অপরদিকে অনুবাত (Leeward) ঢালে (বিপরীত ঢালে) বৃষ্টিপাত খুব কম হয়। বিপরীত পার্শ্বের স্বল্প-বৃষ্টিপাত অঞ্চলকে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল (Rain-shadow area) বলে।
উদাহরণ- আরব সাগরের তীরে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পশ্চিমঢালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে প্রচুর শেলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত হয় কিন্তু পূর্বঢাল বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল। এর ফলে দাক্ষিণাত্যের অভ্যন্তরে কম বৃষ্টিপাত হয়।
ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টি (Cyclonic):
ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালভাবে যদি উষ্ণ ও শীতল বায়ু পরস্পরের দিকে মুখোমুখি এগিয়ে এলে উভয় বায়ুর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। শীতল বায়ুস্তর ভারী বলে সেই বায়ু নীচের দিকে চলে যায় এবং উষ্ণ বায়ুস্তর শীতল বায়ুস্তরের ওপর ঢাল বরাবর উপরে উঠে যায়। ওপরে চাপ কম থাকার জন্য উষ্ণ বায়ু ওপরে উঠে প্রসারিত হয় এবং ঠান্ডার সংস্পর্শে এসে ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। একেই বলে ঘূর্ণবাত-জনিত বৃষ্টি।
উদাহরণ- নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এই ধরনের বৃষ্টিপাত বেশি হয়। ভাদ্র-আশ্বিন মাসে পূর্ব ভারতে মাঝে মাঝে বঙ্গোপসাগর থেকে আসা ক্রান্তীয় ঘর্ণবাতের জন্য প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হয়।
গুঁড়িগুড়ি বৃষ্টিপাত (Drizzle):
নিম্বো-স্ট্যাটাস মেঘ থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আয়তনের জলকণা বিরামহীনভাবে ভূ-পৃষ্ঠে পড়ে। একেই গুঁড়িগুড়ি বৃষ্টিপাত বলে।
তুষারপাত (Snow fall):
ঊর্দ্ধাকাশে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হওয়ার সময় যদি সেখানকার বায়ুর উষ্ণতা হিমাঙ্কের নীচে নেমে যায়, তাহলে ভাসমান জলকণসমূহ তুষারে পরিণত হয়ে ভূপৃষ্ঠে তুষারপাত হয়।
উদাহরণ- উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে বা শীতপ্রধান অঞ্চলে তুষারপাত বেশি হয়।
শিলাবৃষ্টি (Hail & Sleet):
উর্দ্ধাকাশে মেঘ বা বৃষ্টির জলকণাসমূহ অনেক উঁচুতে খুব শীতল স্থানে চলে গেলে সেখানকার প্রচন্ড শৈত্যে ঐ জলকণাসমূহ জমাট বেঁধে ছোট ছোট বরফে পরিণত হয়। ঐ বরফের টুকরোগুলি নীচে নামার সময় আরও জলকণা সংগ্রহ করে আয়তনে বেড়ে যায় এবং বৃষ্টির সাথে বিভিন্ন আকারের বরফকণা মাটিতে পড়ে। একে শিলাবৃষ্টি বলে।
অরণ্য অঞ্চলের বৃষ্টি:
অরণ্য অঞ্চলের বায়ু ঠান্ডা বলে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু ঘণীভূত হয়ে সেই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ঘটায়। একে অরণ্য বৃষ্টিপাত বলে।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য::
•কুয়াশা (Fog), শিশির (Dew), তুহিন (Frost) অধঃক্ষেপণ নয় কারণ এগুলি উর্দ্ধগামী বাষ্পীভূত জলকণা দ্বারা সৃষ্টি হয় না বা মাধ্যকর্ষণের টানে ভূ-পৃষ্ঠেও এসে পড়ে না।
•শিশির:- ভূ-পৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তর অতিরিক্ত শীতল হলে ভাসমান জলীয় বাষ্প ঘণীভূত হয়ে পাতা, ঘাস প্রভৃতির ওপর জলবিন্দুর আকারে সঞ্চিত হয়, একে বলে শিশির।
•তুহিন:- শীতপ্রধান দেশে তীব্র ঠান্ডা পড়লে শিশির বিন্দুগুলি জমাট বেঁধে কঠিনে পরিণত হয়, তখন একে বলে তুহিন।
•সমবর্ষণ রেখা (Isohyet) : ভূপৃষ্ঠের সমান বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলগুলি মানচিত্রে যে কাল্পনিক রেখার সাহায্যে দেখানো হয় সেই রেখাকে সমবর্ষণরেখা বলে।
No comments:
Post a Comment