Breaking


Wednesday, November 30, 2022

রাজ্যপালের ক্ষমতা, কার্যাবলী ও পদমর্যাদা|| Powers, Functions And Rank Of The Governor||




:: রাজ্যপালের ক্ষমতা, কার্যাবলী ও পদমর্যাদা ::

রাজ্যপালের ক্ষমতা, কার্যাবলী ও পদমর্যাদা|| Powers, Functions And Rank Of The Governor||




রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যাবলি ::
ভারতের রাজ্যগুলিতে কেন্দ্রের মতো সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির মতো রাজ্যপাল রাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক শাসকপ্রধান। রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যাবলিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে। যেমন—[1] শাসন-সংক্রান্ত ক্ষমতা, [2] আইন-সংক্রান্ত ক্ষমতা, [3] অর্থ-সংক্রান্ত ক্ষমতা, [4] বিচার-সংক্রান্ত ক্ষমতা এবং [5] স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা ।


1 শাসন-সংক্রান্ত ক্ষমতা: 

সংবিধানের ১৫৪ (১) নং ধারা অনুসারে রাজ্যের শাসন-সংক্রান্ত সমস্ত ক্ষমতা তত্ত্বগতভাবে রাজ্যপালের হাতে রয়েছে।
 ১) রাজ্যের সমস্ত প্রশাসনিক কাজকর্ম তাঁর নামে সম্পাদিত হয়।
 ২) রাজ্যের শাসন-সংক্রান্ত যাবতীয় কাজকর্ম যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় নিয়মকানুন প্রণয়ন করার ক্ষমতা রাজ্যপালের রয়েছে।
 ৩) রাজ্যপালের শাসন-সংক্রান্ত ক্ষমতার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল তাঁর নিয়োগ-সম্পর্কিত ক্ষমতা। রাজ্যপাল এই ক্ষমতাবলে রাজ্য বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতা অথবা নেত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করে থাকেন। পরে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শমতো অন্য মন্ত্রীদেরও তিনি নিয়োগ করেন। মুখ্যমন্ত্রীসহ অন্য মন্ত্রীদের পদচ্যুত করার ক্ষমতাও তাঁর রয়েছে। এ ছাড়া রাজ্যের মহাধিবক্তা (AdvocateGeneral), রাজ্য জনপালন কৃত্যক কমিশনের সদস্য প্রভৃতি উচ্চপদস্থ রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের রাজ্যপাল নিয়োগ করে থাকেন।
 ৪) রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে বলে মনে করলে রাজ্যপাল ৩৫৬ ধারা জারি করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করতে পারেন।
 ৫) রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য বা চ্যান্সেলার হিসেবে রাজ্যপালের একটি স্বতন্ত্র ভূমিকা রয়েছে।



2. আইন-সংক্রান্ত ক্ষমতা: 
রাজ্য আইনসভার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গরূপে রাজ্যপাল যে সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী সেগুলি হল—
 ১) রাজ্য আইনসভার অধিবেশন আহ্বান করা বা অধিবেশন স্থগিত রাখার ক্ষমতা রাজ্যপালের রয়েছে।
 ২) রাজ্য বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতাও তাঁর রয়েছে।
 ৩) রাজ্য আইনসভায় গৃহীত কোনো বিল রাজ্যপালের সম্মতি ছাড়া আইনে পরিণত হতে পারে না।
 ৪) অর্থবিল ছাড়া অন্যান্য বিলকে তিনি রাজ্য আইনসভায় পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠাতে পারেন।
 ৫) এ ছাড়া রাজ্য আইনসভা কর্তৃক অনুমোদিত কিছু বিলের ক্ষেত্রে তিনি নিজে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে বিচারবিবেচনার জন্য পাঠিয়ে দিতে পারেন।
 ৬) রাজ্য আইনসভার অধিবেশন বন্ধ থাকাকালীন জরুরি প্রয়োজনে রাজ্যপালের অধ্যাদেশ বা অর্ডিন্যান্স জারি করার ক্ষমতা রয়েছে।
 ৭) রাজ্যপালের আইন-সংক্রান্ত ক্ষমতার মধ্যে অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলি হল—দ্বিকক্ষবিশিষ্ট রাজ্য আইনসভার ক্ষেত্রে উচ্চকক্ষে শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান, সমাজসেবায় খ্যাতিমান ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেওয়া; দ্বিকক্ষবিশিষ্ট রাজ্য আইনসভায় যুগ্ম অধিবেশন আহ্বান করা; রাজ্য আইনসভায় বাণী প্রেরণ করা; প্রতি বছর রাজ্য আইনসভার প্রথম অধিবেশনের শুরুতে ভাষণ দেওয়া; রাজ্য-জনপালন কৃত্যক পরিষদ, অডিটর জেনারেল প্রভৃতি সংস্থার বার্ষিক রিপোর্ট বিচারবিবেচনা করা ইত্যাদি।

 


3. অর্থ-সংক্রান্ত ক্ষমতা:
 রাজ্যপালের অর্থ-সংক্রান্ত ক্ষমতাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্য বিধানসভায় বাজেট বা অর্থবিল পেশ করার আগে অর্থমন্ত্রীকে রাজ্যপালের অনুমতি নিতে হয়। কোনো আকস্মিক দুর্যোগে রাজ্যে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য রাজ্যপালের হাতে আকস্মিক ব্যয় তহবিলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই তহবিল থেকে অগ্রিম অর্থ দেওয়ার ক্ষমতা রাজ্যপালের রয়েছে।

 


4. বিচার-সংক্রান্ত ক্ষমতা: 
রাজ্য হাইকোর্টের বিচারপতিরা রাজ্যপালের পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হন।রাজ্যের দেওয়ানি আদালতের বিচারপতি, অতিরিক্ত জেলা জজ, দায়রা জজ প্রমুখ রাজ্যপাল কর্তৃক নিযুক্ত হন। এ ছাড়া দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো অপরাধীর দণ্ডাদেশ হ্রাস, স্থগিত, এমনকি ক্ষমা প্রদান করার ক্ষমতাও রাজ্যপালের রয়েছে। তবে মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি এবং সামরিক বা আদালতে দণ্ডিত ব্যক্তিদের রাজ্যপাল ক্ষমা প্রদান করতে পারেন না।

 


5. স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা: 
নিজস্ব বিচারবিবেচনা অনুসারে রাজ্যপালের কাজ করার ক্ষমতাকে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা বলা হয়। স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্যপালকে রাজ্য মন্ত্রীসভার সঙ্গে পরামর্শ করতে হয় না। এমনকি কোনো বিষয় স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার অন্তর্গত কিনা সে প্রশ্নে রাজ্যপালের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এক্ষেত্রে রাজ্যপালের সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা যায় না [১৬৩ (২) নং ধারা]। সংবিধানে যেসব ক্ষেত্রে রাজ্যপালকে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের সুস্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেগুলি হল—
 ২) মণিপুরের পার্বত্য অঞ্চল ও সিকিমের ক্ষেত্রে রাজ্যপালকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে
 ৩) নাগাল্যান্ডের রাজ্যপালকে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে হবে,
 ৪) মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের কয়েকটি অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য দুই রাজ্যের রাজ্যপালকে রাষ্ট্রপতি স্বতন্ত্র উন্নয়ন পর্ষদ গঠনের দায়িত্ব দিলে, সেই পর্ষদের পরিচালনা, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলসমূহের মধ্যে উন্নয়নমূলক ব্যয়ের ন্যায়সংগত বণ্টন প্রভৃতির দায়িত্ব রাজ্যপালকে পালন করতে হবে,
 ৫) উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলগুলির কয়েকটি নির্দিষ্ট প্রশাসনিক বিষয়ে এবং অসম ও তার স্বয়ংশাসিত জেলা পরিষদের মধ্যে খনিজ সম্পদের লভ্যাংশ বণ্টনের ক্ষেত্রে কোনো বিরোধ দেখা দিলে রাজ্যপাল স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন,
 ৬) ১৯৮৬ সালের ৫৫তম সংবিধান সংশোধনী অনুযায়ী অরুণাচল প্রদেশের রাজ্যপালের সেই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে।

 ১) পার্শ্ববর্তী কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসকের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অর্পিত হলে, রাজ্যপাল তা স্বাধীনভাবে পালন করতে পারেন,




 রাজ্যপালের পদমর্যাদা::
রাজ্যপাল যেহেতু নিয়মতান্ত্রিক শাসক তাই তাঁর পদটিকে নেহাতই নামসর্বস্ব পদ বলে অনেকে অভিমত প্রকাশ করেন। অন্যদিকে, সংবিধানের কিছু ব্যবস্থার জন্য তাঁকে পুরোপুরি নিয়মতান্ত্রিক শাসক বলা চলে না। তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা ভোগ করে থাকেন যা তাঁকে শক্তিশালী প্রশাসকের ভূমিকায় অধিষ্ঠিত করেছে। এজন্য সংবিধান বিশেষজ্ঞরা তাঁকে প্রকৃত শাসনকর্তা বলে অভিহিত করেন। রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যাবলি বিশ্লেষণ করে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, তিনি নিছক নিয়মতান্ত্রিক শাসক নন। রাজ্যপালের একটি দ্বৈত ভূমিকা রয়েছে। একদিকে তিনি রাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক শাসকপ্রধান। আবার অন্যদিকে তিনি কেন্দ্রের প্রতিনিধি হিসেবে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার অধিকারী। তবে বিশেষ কয়েকটি ঘটনা বাদ দিলে দেখা যায়, ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে রাজ্যপালরা সাধারণভাবে নিয়মতান্ত্রিক শাসকপ্রধানের ভূমিকাই পালন করে চলেছেন।

No comments:

Post a Comment