Breaking


Tuesday, March 26, 2024

ভারতে সুফি ও ভক্তিবাদী আন্দোলন| Sufi And Bhakti Movement In India

ভক্তি ও সুফি আন্দোলন
ভক্তি ও সুফি আন্দোলন

মধ্যযুগীয় ভারতের ভক্তি ও সুফি আন্দোলন একটি সংমিশ্রিত সংস্কৃতি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল যার উত্তরাধিকার আজও দেখা যায়। আজকে যে বিষয় গুলো আমরা জানবো - সুফিভক্তিবাদী আন্দোলন কি ও কাকে বলে, এই আন্দোলনের সাধক কারা ইত্যাদি।

ভারতে মুসলিম আক্রমণের সময় ইসলাম ধর্মের অধিক প্রচলন ঘটে। সেই সময় হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে দ্বন্দু দেখা দেয়। এর ফলে দুটি জনপ্রিয় আন্দোলন ভারতে হয়- (১) সুফি আন্দোলন ও (২) ভক্তিবাদী আন্দোলন

:: সুফি আন্দোলন ::

ইসলামের মধ্যে থেকেই সুফিবাদের জন্ম। ভগবানকে পাওয়া যায় তাঁকে ভালোবেসে, প্রার্থনা করে, উপোস করে এবং আচার-অনুষ্ঠান পালন করে-এই ছিল সুফিদের মতবাদ। সুফিদের চারটি শাখা ছিল-চিস্তি সম্প্রদায়, নকসাবন্দী সম্প্রদায়, কোয়াদিরিয়া সম্প্রদায় ও সুহারাবর্দী সম্প্রদায়। এর মধ্যে চিস্তি সম্প্রদায়ের প্রভাব সারা ভারতে সর্বাধিক প্রসারিত হয়। সুফি দর্শনে 'পীর' বা গুরুর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঈশ্বরের সাথে আত্মার মিলনের জন্য শিষ্যকে পীর সঠিক পথ ও পদ্ধতির সন্ধান দেন। সুফিরা নির্জন স্থান বা 'দরগা'য় বসবাস করতেন।

সুফিরা দুই সম্প্রদায়ের ছিলেন। ইসলামের নিয়মকানুন যাঁরা মানতেন তাঁদের বলা হতো 'বা-সাহারা' এবং যাঁরা মানতেন না তাঁদের বলা হতো 'বে-সাহারা'। চিস্তি ও সুহারাবর্দীরা 'বা-সাহারা' ছিলেন এবং অপরদিকে কালান্দার সুফিরা ছিলেন 'বে-সাহারা'।

ভারতে দ্বাদশ শতাব্দীতে সুফি আন্দোলন জনপ্রিয়তা লাভ করে। চিস্তি সম্প্রদায়ের খাজা মৈনুদ্দিন চিস্তি (১১৪১-১২৩৫ খ্রি.) ভারতে সুফিবাদের প্রচলন ঘটান। তিনি আফগানিস্থান থেকে ১১৯২ খ্রি. ভারতে আসেন এবং ১১৯৫ সাল থেকে আজীবন রাজস্থানের আজমীরে বসবাস করেন। অন্যান্য সুফি সন্তরা হলেন-কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকি (১২৩৬ খ্রি. দিল্লিতে), হজরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া (১৩৩৫ খ্রি. দিল্লিতে। তাঁর জীবতকালে দিল্লিতে সাতজন সুলতান অধিষ্ঠিত হয়েছেন) এবং ফরিদুদ্দিন গঞ্জ-ই শক্কর (১২৬৫ খ্রি. পাকিস্তানে)।

চিস্তি সম্প্রদায়ের সুফিসন্ত নিজামউদ্দিন আউলিয়াকে হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই শ্রদ্ধা করতো। সুহারাবর্দী সম্প্রদায়ের সুফিরা বাংলায় জনপ্রিয়তা লাভ করে। চিস্তি সম্প্রদায়ের সন্তরা নির্জন স্থানে থেকে খাল্কা স্থাপন করে গভীর সাধনার পক্ষপাতী ছিলেন। তাঁদের জীবনযাত্রা ছিল কঠোর সংযমপূর্ণ। সংগীত, নৃত্য ও যোগসাধনার মাধ্যমে এঁরা বাণী প্রচার করতেন। এঁদের ভক্তিসঙ্গীত 'সমা' খুবই জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু সুহারাবর্দী সম্প্রদায়ের সন্তরা কৃচ্ছসাধন করার বিরোধী ছিলেন। এঁরা ধর্ম সংক্রান্ত বা বিচারবিভাগীয় উচ্চপদে যুক্ত থেকে ধর্মচর্চা করতেন।

:: ভক্তিবাদী আন্দোলন ::

মানুষ ও ভগবানের মধ্যে ভালবাসার সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে। প্রেম ও পূজার দ্বারা ভগবানকে পাওয়া যায়। আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার তথা ভক্তের সাথে ভগবানের রহস্যময় বা অতীন্দ্রিয় মিলন ভক্তিবাদের মূলকথা। ভক্তিবাদী সাধকেরা প্রথাগতভাবে কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। ভক্তিবাদীরা কোনো আচার-অনুষ্ঠান পালন করতেন না। কৃষ্ণ, শিব, রাম, আল্লাহ সকলেই ভক্তিবাদীদের হৃদয়মন্দিরে একাকার হয়ে বিরাজ করতো। তাঁদের মতে ঈশ্বর এক এবং অভিন্ন। এঁরা মূর্তিপূজার বিরোধিতা করেছেন। দ্বাদশ শতাব্দীতে সুফি আন্দোলনের সময় ভারতে হিন্দুদের ভক্তিবাদী আন্দোলনও জনপ্রিয়তা লাভ করে।

ভারতে ভক্তি আন্দোলন প্রথম শুরু হয় সপ্তম শতাব্দীতে দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুতে। পরবর্তীতে উত্তর ভারতে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। দক্ষিণ ভারতে এই ভক্তি আন্দোলনের মূল দেবতা ছিল শিব, বিষ্ণু এবং তাঁদের অবতার। উত্তর ভারতে এই আন্দোলনের দেবতা ছিল রাম ও কৃষ্ণ। এঁদের দুজনকে বিষ্ণুর অবতার বলেও বিশ্বাস করা হতো। ভক্তি আন্দোলন যুগের সাথে সাথে এক একজন ভগবানকে সর্বেসর্বা হিসেবে পরিগণিত করেছে।

•ভারতে চতুর্দশ থেকে সপ্তদশ শতক পর্যন্ত ভক্তি আন্দোলনের জোয়ার বয়ে যায়। দ্বাদশ শতকে ভক্তি আন্দোলনের নেতা বাসব ভগবান হিসেবে শিবকে সর্বাধিক গুরুত্বসহকারে আরাধনা করেন।

•পঞ্চদশ শতকে রামানন্দ ভক্তি আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। তাঁর ধারণায় ভগবান রামচন্দ্র ছিলেন সর্বেসর্বা। তিনি বারাণসীতে ধর্মীয় মত প্রচারের জন্য আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন।

::: ভক্ত কবীর (১৪৪০-১৫১৮ খ্রি.) ::

ভক্তি আন্দোলন প্রচারের প্রধান ছিলেন। হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায় যে একই আদর্শে অনুপ্রাণিত তা প্রমাণ করেন। তাঁর মতবাদ তিনি হিন্দি ভাষায় 'দোহা' যা কাব্যিক ছন্দের মাধ্যমে প্রচার করেন। তিনি বলেন 'পাথরের মূর্তির মধ্যেই যদি ঈশ্বরের অধিষ্ঠান, তাহলে আমি সুবিশাল পর্বতকেই দেবতা হিসেবে পূজা করার পক্ষপাতী'।

•সপ্তদশ শতকে বাংলায় (হালিশহরে) রামপ্রসাদ সেন (জন্ম: ১৭১৮-১৭৭৫ খ্রি.) শ্যামাসঙ্গীত রচনা করেন যা ভক্তি আন্দোলনের এক অঙ্গ।

•দক্ষিণের ভক্তিধর্মের নারী সাধিকা ছিলেন 'অন্ডাল'। তাঁকে 'দক্ষিণের মীরাবাঈ' নামে অভিহিত করা হয়।

•বৈষ্ণব ভক্তি আন্দোলনের মূল দেবতা ছিলেন বিষ্ণু এবং তাঁর অবতার কৃষ্ণ। এই আন্দোলনের বিখ্যাত ব্যক্তিরা হলেন-রামানুজাচার্য (১০১৭-১১৩৭), মাধবাচার্য (১১৯৯-১২৭৮), নিম্বার্কাচার্য (ত্রয়োদশ শতাব্দী), বল্লভাচার্য (১৪৭৯-১৫৩১), শ্রীমন্ত শঙ্করদেব (১৪৪৯-১৫৬৮), চৈতন্য মহাপ্রভু (১৪৮৬-১৫৩৪) এবং স্বামীনারায়ণ (১৭৮১-১৮৩০)।


আশাকরি উপরের দেওয়া ভারতের সুফি ও ভক্তিবাদী আন্দোলন তথ্যটি পড়ে নিয়েছো। একনজরে দেখে নিলাম সুফি ও ভক্তিবাদী আন্দোলন সময়কালে উল্লেখযোগ্য দিকগুলো। পড়াশোনার বিষয়ে সব ধরনের তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করো। আজকের তথ্য গুলো তোমাদের কেমন লাগলো কমেন্টে জানাও। ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করো।

No comments:

Post a Comment