Nobel Prize |
আজকে আমাদের আলোচ্য বিষয় নোবেল পুরস্কার সম্পর্কে জ্ঞাতব্য বিষয়। অক্টোবরের প্রথম সোমবার থেকে ছয় দিনব্যাপী সারা বিশ্বের ছয়জন পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা শুরু হয়। নোবেল পুরস্কার সমন্ধে যে বিষয় গুলো আজকে আমরা জানবো - নোবেল পুরস্কার কে প্রতিষ্ঠা করেন, কোন সালে চালু হয়, কোন কোন ক্ষেত্রে এবং কোন দিন দেওয়া হয় ইত্যাদি।
•প্রতিষ্ঠাতা:-
আলফ্রেড বার্নাড নোবেল (২১.১০.১৮৩৩-১০.১২.১৮৯৬) ছিলেন সুইডেনের (স্টকহোম) একজন কেমিস্ট, ইঞ্জিনিয়ার, আবিষ্কারক, ব্যবসায়ী এবং সমাজসেবক। বিস্ফোরক পদার্থ ডিনামাইট আবিষ্কারের ফলে যে বিপুল সম্পত্তির অধিকারী হয়েছিলেন সেই সম্পত্তির বেশিরভাগ অংশ তিনি উইল করে যান এবং নির্দেশ দেন প্রতিবছর এমন পাঁচজনকে (অর্থনীতি বাদে) পুরস্কৃত করা হবে, যাঁরা 'পুরস্কারের আগের এক বছর মানবসভ্যতায় সর্বোচ্চমানের অবদান রাখবেন'।
•যে সালে চালু হয়:-
১৯০১ খ্রিস্টাব্দের ১০ ডিসেম্বর। (ইটালিতে (সানরেমো) আলফ্রেড নোবেল প্রয়াত হন ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দের ১০ ডিসেম্বর। আলফ্রেড নোবেল-এর পঞ্চম মৃত্যুদিবস থেকে এই পুরস্কার প্রদান করা শুরু হয়)। শারীরবিদ্যা বা চিকিৎসাবিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও সাহিত্যে প্রথম নোবেল পুরস্কার সুইডেনের স্টকহোমে প্রদান করা হয় এবং শান্তিতে অসলোর ক্রিস্টিয়ানিয়াতে প্রদান করা হয়। আলফ্রেড নোবেল অর্থনীতিতে পুরস্কার চালু করেন নি। ১৯৬৮ সালে সুইডেনের সেরিজেস ব্যাঙ্ক (সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক) তাদের ৩০০ তম প্রতিষ্ঠা দিবসে নোবেলের স্মৃতিতে এই পুরস্কারের জন্য অনুদান দেন। সেই অনুদানের অর্থ থেকেই ১৯৬৯ সাল থেকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কারের নাম হয় সেরিজেস রিস্কব্যাঙ্ক প্রাইজ ইন ইকোনমিক্স সাইন্সেস ইন মেমোরি অফ আলফ্রেড নোবেল।
• যে যে ক্ষেত্রে দেওয়া হয় ছয়টি ক্ষেত্রে:-
1. শারীরবিদ্যা বা চিকিৎসাবিজ্ঞান
2. পদার্থবিদ্যা
3. রসায়ন
4. সাহিত্য
5. শান্তি
6. অর্থনীতি বা সামাজিক বিজ্ঞান (চালু হয় 1968 সালে এবং প্রদান করা হয় 1969 সালে।)
•যে দিনে পুরস্কৃত করা হয়:-
10 ডিসেম্বর। আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুদিনে
•যে যে সংস্থা নোবেল পুরস্কার প্রদান করে:-
দ্য রয়্যাল সুইডিশ আকাডেমি অব সায়েন্সেস- পদার্থবিদ্যা এবং রসায়ন বিভাগে।
দ্য নোবেল অ্যাসেম্বলি অব ক্যারোলিনস্কা ইন্সটিটিউট- চিকিৎসাবিজ্ঞান বিভাগে।
দ্য সুইডিশ অ্যাকাডেমি-সাহিত্য বিভাগে।
দ্য কমিটি অব দ্য নরওয়েজিয়ান পার্লামেন্ট- শান্তি বিভাগে।
দ্য সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অব সুইডেন-অর্থনীতি বিভাগে।
•নোবেল পুরস্কারের মূল্য:-
7 মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার।
•একটি বিষয়ে সর্বাধিক যত জন নোবেল পেতে পারেন:-
সর্বাধিক তিনজন যুগ্মভাবে একই বিষয়ে নোবেল পুরস্কার পেতে পারেন।
•দুবার নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন:-
মাদাম মেরি কুরি (একমাত্র মহিলা, পদার্থবিদ্যায় 1903 এবং রসায়নবিদ্যায় 1911/ফ্রান্স), ড. লিনিয়াস কার্ল পাওলিং (রসায়নবিদ্যায় 1954/এবং শান্তিতে 1962/আমেরিকা), জন বার্ডিন (পদার্থবিদ্যায় 1956 এবং 1972) এবং ফ্রেডরিক স্যাঙ্গার (রসায়নবিদ্যায় 1958 এবং 1980 সালে)।
•সর্বপ্রথম নোবেল প্রাপক:-
উইলিয়াম রন্টজেন (১৯০১ খ্রি., এক্স রশ্মির আবিষ্কর্তা, জার্মানি)।
•প্রথম মহিলা প্রাপক:-
মাদাম মেরি কুরি (পদার্থবিদ্যা 1903, ফ্রান্স)।
•বয়ষ্কতম প্রাপক:-
জন বি গুডএনাফ (৯৭ বছর বয়সে, রসায়নবিজ্ঞানে, ২০১৯ খ্রি.)
•সর্বকনিষ্ঠ প্রাপক:-
ইউসুফজাই মালালা (১৭ বছর বয়সে, শান্তিতে ২০১৪ সালে, পাকিস্তান)। এর আগের জন ছিলেন ইংল্যান্ডের লরেন্স ব্র্যাগ, ২৫ বছর বয়সে, পদার্থবিদ্যায়, ১৯১৫ খ্রি.।
•তিনবার নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন:-
দ্য ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রশ (নোবেল শান্তি পুরস্কার-1917, 1944, 1963)
•প্রথম দম্পতি যারা নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন:-
একসাথে মাদাম মেরি কুরি ও পিয়ের কুরি (পদার্থবিদ্যা, 1903 খ্রি., ফ্রান্স)। 1935 সালে পিয়ের কুরি ও মাদাম কুরির মেয়ে আইরিন জোলিও কুরি রসায়নে নোবেল পান এবং তাঁর স্বামী হেনরি ল্যাবোইসের শান্তিতে নোবেল পান ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে।
•মরণোত্তর নোবেল পুরস্কার লাভ করেন:-
প্রথমজন এরিক অ্যাক্সেল কার্লফেল্ডট (সুইডেন, ১৯৩১ খ্রি., সাহিত্যে)। দ্বিতীয়জন ড্যাগ হ্যামারশোল্ড (শান্তি, ১৯৬১ খ্রি.)। ১৯৭৪ সালের এক সংশোধনীতে উল্লেখ করা হয় যে নোবেল কেবলমাত্র জীবিত ব্যক্তিকেই প্রদান করা হবে। যদি কোনো প্রাপক পুরস্কার ঘোষিত হওয়ার পর মারা যান তবেই তাঁকে মরণোত্তর নোবেল দেওয়া হবে।
•নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন:-
প্রথমজন ফরাসি সাহিত্যিক জঁ পল সাত্র, ১৯৬৪ খ্রি. সাহিত্যে এবং দ্বিতীয়জন লে ডাক থো যিনি যুগ্মভাবে হেনরি কিসিংজারের সঙ্গে ১৯৭৩ সালে শান্তিতে এই পুরস্কার পান। ডাক থো ভিয়েতনামের তৎকালীন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পুরস্কার নিতে অস্বীকার করেন। আজ পর্যন্ত দুজন সাহিত্যিক নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৫৮ সালে রুশ সাহিত্যিক বরিস প্যস্তেরনাক। তিনি পুরস্কার গ্রহণ করেন, কিন্তু সোভিয়েত প্রশাসন তাঁকে এই পুরস্কার ফিরিয়ে দিতে বাধ্য করেন। ১৯৬৪ সালে আর এক ফরাসি সাহিত্যিক জঁ পল সাত্র এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন।
আশাকরি উপরের দেওয়া নোবেল পুরস্কার সম্পর্কে জ্ঞাতব্য বিষয় গুলো পড়ে নিয়েছো। একনজরে দেখে নিলাম নোবেল পুরস্কারের সম্পূর্ণ বিষয়। পড়াশোনার বিষয়ে সব ধরনের তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করো। আজকের তথ্য গুলো তোমাদের কেমন লাগলো কমেন্টে জানাও। ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করো।
No comments:
Post a Comment