সরল যন্ত্র কি ও কাকে বলে বিস্তারিত আলোচনা||Detailed discussion of what and what is simple instrument
প্রশ্ন: যন্ত্র কাকে বলে?
উত্তর: যে ব্যবস্থার সাহায্যে কম বল প্রয়োগ করে অনেক বেশি বাঁধাকে সহজে অতিক্রম করা যায়, তাকে যন্ত্রে বলে।
প্রশ্ন: যন্ত্রের সাহায্যে কত প্রকার বাঁধা কে অতিক্রম করা যাবে ?
উত্তর: যথা তিন প্রকার বাধা সাধারণত অতিক্রম করা হয়। যথা: ১) অভিকর্ষ বলের বাধা ২) ঘর্ষণজনিত বলের বাধা এবং ৩) পদার্থের জাডোজনিত বাধা।
প্রশ্ন: সরল যন্ত্র কাকে বলে?
উত্তর: যে যন্ত্রে কেবলমাত্র যান্ত্রিক শক্তি ব্যবহার করা হয়, তাকে সরল যন্ত্র বলে।
প্রশ্ন: সরল যন্ত্রের উদাহরণ দাও।
উত্তর: লিভার, নততল, চক্র ও অক্ষদণ্ড প্রভৃতি হল সরল যন্ত্র।
প্রশ্ন: প্রযুক্ত বল ও অতিক্রম বাধা কি?
উত্তর: যন্ত্রে যে বল প্রয়োগ করা হয়, তাকে প্রযুক্ত বল বা উদ্যম বলে এবং যন্ত্রের সাহায্যে যে বাধা বা ভারকে অতিক্রম করা হয়, সেই বাধা বা ভারকে অতিক্রম বাধা বা ভার বলে।
প্রশ্ন: যান্ত্রিক সুবিধা কাকে বলে?
উত্তর: যন্ত্র দ্বারা অতিক্রান্ত বাধা এবং যন্ত্রে প্রযুক্ত বলের অনুপাতকে যান্ত্রিক সুবিধা বলে।
প্রশ্ন: কর্মদক্ষতা কাকে বলে?
উত্তর যন্ত্র থেকে প্রাপ্তকার্য এবং যন্ত্রে প্রযুক্ত কার্য বা শক্তির অনুপাতকে যন্ত্রের কর্মদক্ষতা বলে। কর্মদক্ষতার কোনো একক নেই। যন্ত্রের কর্মদক্ষতা সবসময় 1- এর কম হয়।
প্রশ্ন: যন্ত্রের সাহায্যে কি শক্তির পরিমাণ বাড়ানো যায় ?
উত্তর: যন্ত্রের সাহায্যে কম বল প্রয়োগ করে বেশি বাধা অতিক্রম করা যায়। কিন্তু যন্ত্রের সাহায্যে শক্তির পরিমাণ বাড়ানো যায় না। বরং ঘর্ষণ প্রভৃতি বাধা অতিক্রম করতে কিছু পরিমাণ শক্তির অপচয় হয়। এজন্য যন্ত্র ব্যাবহার করে শক্তির খরচ বাঁচানো যায় না।
প্রশ্ন: লিভার কাকে বলে?
উত্তর: লিভার হল এমন একটি সোজা বা বাঁকানো শক্ত দন্ড যা একটি স্থির বিন্দুকে কেন্দ্র করে ওই বিন্দুর চারদিকে অবাধে ঘুরতে পারে। এই স্থির বিন্দুকে লিভারের আলম্ব বলে। আলম্বে একই দিকে বা বিপরীত দিকে দুটি বিন্দুর একটিতে বল এবং অন্যটিতে ভার প্রয়োগ করা হয়।
প্রশ্ন: বলবাহু কাকে বলে?
উত্তর: আলম্ব থেকে বলের প্রয়োগ বিন্দুর দূরত্বকে বলবাহু।
প্রশ্ন: রোধবাহু কাকে বলে?
উত্তর: আলম্ব থেকে ভারের প্রয়োগ বিন্দুর দূরত্বকে রোধবাহু বলে।
প্রশ্ন: লিভার কত প্রকার ও কি কি?
উত্তর: আলম্ব, প্রযুক্ত বল ও ভরের প্রয়োগ বিন্দুর পারস্পারিক অবস্থানের ওপর নির্ভর করে, লিভারকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়: ১) প্রথম শ্রেণীর লিভার ২) দ্বিতীয় শ্রেণীর লিভার এবং ৩) তৃতীয় শ্রেণীর লিভার।
প্রশ্ন: প্রথম শ্রেণীর লিভার কাকে বলে?
উত্তর: যে লিভারে আলম্ব বিন্দুর একদিকে ভার এবং অন্যদিকে প্রযুক্ত বল প্রিয়া করে, তাকে প্রথম শ্রেণীর লিভার বলে। এই লিভারের প্রযুক্ত বলের অভিমুখ ভারের অভিমুখে হয়।
প্রশ্ন: প্রথম শ্রেণীর লিভারের যান্ত্রিক সুবিধা কত?
উত্তর : প্রথম শ্রেণীর লিভারের যান্ত্রিক সুবিধা 1 -এর সমান এবং 1- এর চেয়ে কম হতে পারে বা 1- এর চেয়ে বেশি হতে পারে।
প্রশ্ন: প্রথম শ্রেণীর লিভারের উদাহরণ দাও।
উত্তর : নলকূপের হাতল, কাঁচি, সাঁড়াশি, পেরেক তোলার হাতুড়ি, বেলচা, কোদাল প্রভৃতি প্রথম শ্রেণীর লিভার।
প্রশ্ন: ঢেঁকির ও সাধারন তুলাদন্ডের যান্ত্রিক সুবিধা কত ?
উত্তর: ঢেকির যান্ত্রিক সুবিধা 1- এর কম এবং সাধারণ তুলাদন্ডের যান্ত্রিক সুবিধা 1- এর সমান।
প্রশ্ন: দ্বিতীয় শ্রেণীর লিভার কাকে বলে?
উত্তর: যে লিভারের এক প্রান্তে আলম্ব থাকে ও অপর প্রান্তে বল প্রয়োগ করা হয় এবং আলম্ব ও বলের প্রয়োগ বিন্দুর মাঝের কোনো স্থানে ভার ক্রিয়া করে, তাকে দ্বিতীয় শ্রেণীর লিভার বলে।
প্রশ্ন: দ্বিতীয় শ্রেণীর লিভারের যান্ত্রিক সুবিধা কত?
উত্তর: দ্বিতীয় শ্রেণীর লিভারের যান্ত্রিক সুবিধা সব সময়ই 1- এর বেশি হয়।
প্রশ্ন: দ্বিতীয় শ্রেণীর লিভারের উদাহরণ দাও।
উত্তর: এক চাকার হাতগাড়ি, ছিপি খোলার চাবি, যাতি, নৌকার দাঁড়, ছিপি চাপার যন্ত্র প্রভৃতি দ্বিতীয় শ্রেণীর লিভার।
প্রশ্ন: তৃতীয় শ্রেণীর লিভার কাকে বলে?
উত্তর: যে লিভারের এক প্রান্তে আলম্ব ও অন্য প্রান্তে ভার থাকে এবং দুই প্রান্তের মাঝে যে-কোনো বিন্দুতে প্রযুক্ত বল ক্রিয়া করে, তাকে তৃতীয় শ্রেণীর লিভার বলে।
প্রশ্ন: তৃতীয় শ্রেণীর লিভারের যান্ত্রিক সুবিধা কত?
উত্তর: তৃতীয় শ্রেণীর লিভারের যান্ত্রিক সুবিধা 1-এর কম হয়।
প্রশ্ন: তৃতীয় শ্রেণীর লিভারের উদাহরণ দাও।
উত্তর: মানুষের বাহু, চিমটা, মাল তোলার ক্রেন , পাউরুটি কাটার ছুড়ি, মুখের চোয়াল, মাছ ধরার ছিপ প্রভৃতি তৃতীয় শ্রেণীর লিভার।
প্রশ্ন: আনততল বা নততল কাকে বলে ?
উত্তর: কোনো মসৃণ পাটাতন বা ওই জাতীয় কোন সমতলকে অনুভূমিক না রেখে যদি ভূমিতলের সঙ্গে যে-কোন সূক্ষ্মকোণে রাখা হয়, তবে ওই তলকে আনততল বা নততল বলে। আনততল একটি সরল যন্ত্র।
প্রশ্ন: আনততল কি কাজে ব্যবহার করা হয়?
উত্তর: ১) লরি, মালগাড়ি প্রভৃতিতে মাল বোঝাই করতে আনততল ব্যবহার করা হয়। ২) এছাড়া খাড়া পাহাড়ের গায়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে যে রাস্তা তৈরি করা হয় তা আনততলের মত কাজ করে। ওই ঘোরানো রাস্তায় পাহাড়ে উঠতে বা নামতে পরিশ্রম অনেক কম হয়।
প্রশ্ন:চক্র ও অক্ষদন্ড কাকে বলে?
উত্তর: বেশি ব্যাসার্ধে বেলনকে চক্র এবং কম ব্যাসার্ধের লম্বা বেলনটিকে অক্ষদণ্ড বলে।
প্রশ্ন: কোথায় চক্র ও অক্ষ দণ্ডের প্রয়োগ হয়?
উত্তর: ১) স্টিমার ও জাহাজের নোঙ্গর তোলার ক্যাপস্টান যন্ত্রে চক্র ও অক্ষদণ্ডের নীতি প্রয়োগ করা হয়। ২) কুয়ো থেকে জল তুলতে চরকি কল ব্যবহার করা হয়। চরকি কলে চক্রের পরিবর্তে একটি হাতল থাকে। হাতলটিকে ঘুরিয়ে জল তোলা হয়।
প্রশ্ন: চক্র ও অক্ষদণ্ডের যান্ত্রিক সুবিধা কত হয়?
উত্তর: চক্র ও অক্ষদণ্ডের যান্ত্রিক সুবিধা 1- এর বেশি হয়।
প্রশ্ন: আনততলের যান্ত্রিক সুবিধা কত হয়?
উত্তর: এই যন্ত্রের যান্ত্রিক সুবিধা সকল সময় 1- এর অধিক হয়।
No comments:
Post a Comment